জিলহজ্জ মাসের রোজা,আমল ও ফজিলত ২০২৫

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা , টেক যুক্তি ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আজ আমি আপনাদের জানাবো জিলহজ্জ মাসের রোজা,আমল ও ফজিলত ২০২৫ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

জিলহজ্জ মাস হলো ইসলামিক ক্যালেন্ডারের ১২তম মাস, যাহা হিজরি সনের শেষ মাস। এই মাসটি মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এই মাসেই পবিত্র হজ্ব পালিত হয়। এছাড়া, জিলহজ্জ মাসে ঈদুল আযহা বা কুরবানির ঈদও পালন করা হয়।

জিলহজ্জ মাসের রোজা ২০২৫

জিলহজ্জ মাসের রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং এর প্রথম দশ দিন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ন।এই মাসটি মুসলমানদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এতে ঈদুল আযহা পালিত হয়।২০২৫ সালে জিলহজ্জ মাসের রোজা রাখার সময়সূচী জানতে হলে হিজরি ক্যালেন্ডার দেখতে হবে।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা সুন্নত। ঈদের দিন (১০ জিলহজ্জ), ১১ জিলহজ্জ, এবং ১২ জিলহজ্জ রোজা রাখা হারাম।জিলহজ্জ মাসের ৯ম এবং ১০ম দিনে রোজা রাখা মোস্তাহাব (প্রত্যেক মুসলমানের জন্য পুরস্কারস্বরূপ)।১৩ জিলহজ্জ, ১৪ জিলহজ্জএবং ১৫ জিলহজ্জ রোজা রাখা সুন্নত।

জিলহজ্জ মাসের রোজা রাখলে যে সওয়াব

জিলহজ্জ মাসের রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত ও সওয়াব রয়েছে। এই মাসের প্রথম দশ দিন, বিশেষত আরাফাত দিবসে রোজা রাখা সুন্নত এবং এতে আল্লাহ তায়ালার নিকট অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। এখানে জিলহজ্জ মাসের রোজা রাখার কিছু ফজিলত ও সওয়াব উল্লেখ করা হলো:

প্রথম দশ দিনের রোজা: জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই দিনগুলোতে ইবাদতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আল্লাহর নিকট এই দশ দিনের আমল অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয় কোনো আমল নেই।” সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন: “হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর পথে জিহাদও না?” তিনি বললেন: “আল্লাহর পথে জিহাদও না, তবে যে ব্যক্তি জান-মাল নিয়ে জিহাদে বের হয় এবং কিছুই ফিরে আসে না (অর্থাৎ শাহাদাতবরণ করে)।” (সহিহ বুখারি)

আরাফাত দিবসের রোজা: জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ, অর্থাৎ আরাফাত দিবসের রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এদিনের রোজা এক বছরের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পাপ মোচন করে।রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, আরাফাত দিবসের রোজা এক বছরের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।” (মুসলিম)

নফল রোজা: জিলহজ্জ মাসের অন্যান্য দিনেও রোজা রাখা নফল হিসেবে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় এবং ইবাদতে বরকত আসে।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল কী কী?

জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ। এই দিনগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ইবাদত ও আমল করা সুন্নত ও মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য হয়। নিচে এই ১০ দিনের আমলগুলোর একটি তালিকা প্রদান করা হলো:

আমলবর্ণনা
রোজা রাখাপ্রথম ৯ দিন রোজা রাখা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। বিশেষ করে, আরাফাত দিবসের (৯ জিলহজ্জ) রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ, যা এক বছরের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পাপ মোচন করে।
তাহলিল, তাকবির ও তাহমিদএই দিনগুলোতে বেশি বেশি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, “আল্লাহু আকবর” এবং “আলহামদুলিল্লাহ” পাঠ করা উত্তম। এসব যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।
কোরআন তিলাওয়াতকোরআন পাঠ করা ও তাফসীর অধ্যয়ন করা এই দিনগুলোতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
নফল নামাজবেশি বেশি নফল নামাজ পড়া উচিত। যেমন, তাহাজ্জুদ, চাশত ও আওয়াবিন নামাজ আদায় করা।
তাওবা ও ইস্তেগফারএই দিনগুলোতে বেশি বেশি তাওবা করা ও ইস্তেগফার করা উচিত। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি করা উচিত।
সদকা ও দানদান-খয়রাত করা, গরীব-দুঃখীদের সাহায্য করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এসব আমল আল্লাহর নিকট অনেক সওয়াবের কারণ হয়।
কুরআন শেখানো ও শিক্ষা গ্রহণঅন্যদের কুরআন শেখানো ও নিজে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করা এই সময়ে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ।
সালাতুল তাসবীহসালাতুল তাসবীহ নামাজ পড়া, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নত।
হজ ও ওমরাহযারা সক্ষম, তাদের জন্য এই সময়ে হজ ও ওমরাহ পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ আমল।
দোয়া করাবেশি বেশি দোয়া করা এবং আল্লাহর কাছে নিজের ও অন্যদের জন্য প্রার্থনা করা।
এই তালিকাটি জিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমলসমূহের সংক্ষিপ্ত ও সুসংগঠিত রূপে উপস্থাপন করেছে।

জিলহজ্জ মাসের ১০ দিন কি রোজা রাখতে হবে?

জিলহজের প্রথম ১০দিন রোজা পালন করা উত্তম। মুসলিমরা এই সময় রোজা রাখেন। আর রাতে নফল ইবাদত করেন। হাদিস শরিফে রাসূল সা: এই ১০ দিনের প্রতিটি রোজাকে পুরো বছরের রোজার সমতুল্য বলেছেন।

৯ জিলহজ্জ নাকি আরাফার দিনে রোজা রাখা উচিত?

৯ জিলহজ্জ রোজা রাখলে আরাফার দিনের রোজার ফজিলত পাওয়া যায়।”আরাফার দিন রোজা রাখা একটি বছরের পাপ ক্ষমা করে দেয় এবং আগামী বছরের পাপ থেকে রক্ষা করে।” (সহীহ মুসলিম)।”আরাফার দিনের রোজার সওয়াব আকাশ ও জমিনের সমস্ত রোজার সওয়াবের সমান।” (তিরমিযি)।

জিলহজ্জ মাসের ১ তারিখ ২০২৫

১৪৪৬ হিজরী সনের জিলহজ্জ মাসের ১ তারিখ পড়ছে ৮ জুন ২০২৫ সালের রোজ শনিবার। এইদিন হতে জিলহজ্জ মাসের রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ।জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন রোজা রাখা সুন্নত।

জিলহজ্জ মাসে চুল-নখ না কাটা নিয়ে ইসলাম কী বলে?

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন বিশেষত কোরবানির সময়কে সামনে রেখে চুল ও নখ না কাটার ব্যাপারে ইসলামে কিছু বিধান রয়েছে।ইসলামে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে (ধুলহজ্জাহ) কুরবানি দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে পুরুষদের জন্য চুল-নখ কাটা নিষিদ্ধ।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

“যখন (জিলহজ্জ মাসের) প্রথম দশ দিন উপস্থিত হয়, আর তোমাদের কেউ কুরবানি করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন তার চুল ও নখের কিছু স্পর্শ (কর্তন) না করে।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ২৭৮২; সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৪৯৫৫)

উম্মে সালামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “যখন জিলহজ্জ মাস শুরু হয় এবং তোমাদের কেউ কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা করে, সে যেন তার চুল ও নখ কিছুই না কাটে, যতক্ষণ না সে কোরবানি দেয়।” (মুসলিম ১৩৩৮)

নিষেধাজ্ঞার কারণ:

কুরবানি হল আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সমর্পণের একটি মাধ্যম। জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে চুল-নখ না কেটে একজন ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি তার শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে।চুল-নখ না কেটে একজন ব্যক্তি নিজেকে কুরবানির সাথে সম্পৃক্ত করে। এটি দেখায় যে সে কুরবানির আধ্যাত্মিক মর্ম বুঝতে পেরেছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন কুরবানির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। চুল-নখ না কেটে একজন ব্যক্তি নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে কুরবানির জন্য প্রস্তুত করে।

মনে রাখার বিষয় হলঃ

এই নিষেধাজ্ঞা কেবলমাত্র পুরুষদের জন্য। মহিলাদের জন্য জিলহজ্জ মাসে চুল-নখ কাটা নিষেধ নয়।যদি কোন ব্যক্তি অসুস্থ থাকে বা অন্য কোন বৈধ কারণে চুল-নখ কাটতে হয়, তাহলে সে করতে পারে।কুরবানি না করলে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে চুল-নখ কাটা নিষেধ নয়।জিলহজ্জ মাসের রোজা ও হজ্জের সাথে চুল-নখ না কাটার এই নিষেধাজ্ঞার কোন সম্পর্ক নেই।

জিলহজ্জ মাসের যেসব দিনে রোজা রাখা সুন্নত

জিলহজ্জ মাসের বেশিরভাগ দিনেই রোজা রাখা সুন্নত।জিলহজ্জ মাসের প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন রোজা রাখে, তার জন্য প্রত্যেক দিনের রোজার জন্য এক মাস রোজা রাখার সওয়াব পাবে।” (সুনানে নাসায়ি)। ১৩, ১৪ ও ১৫ জিলহজ্জ এর দিনগুলোতে রোজা রাখাও সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি জিলহজ্জ মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখে, সে যেন তার সমস্ত জীবনের দিন রোজা রেখেছে।” (ইবনে মাজাহ)

জিলহজ্জ মাসের রোজার সময়সূচী:

তারিখদিনরোজা রাখার বিধান
৩০ জুনশুক্রবাররোজা রাখা সুন্নাহ
১ জুলাইশনিবাররোজা রাখা সুন্নাহ
২ জুলাইরবিবাররোজা রাখা সুন্নাহ
৩ জুলাইসোমবাররোজা রাখা সুন্নাহ
৪ জুলাইমঙ্গলবাররোজা রাখা সুন্নাহ
৫ জুলাইবুধবাররোজা রাখা সুন্নাহ
৬ জুলাইবৃহস্পতিবাররোজা রাখা সুন্নাহ
৭ জুলাইশুক্রবারঈদুল আযহা (রোজা রাখা হারাম)
৮ জুলাইশনিবাররোজা রাখা হারাম
৯ জুলাইরবিবাররোজা রাখা হারাম
১০ জুলাইসোমবারতাজিয়ার দিন (রোজা রাখা সুন্নাহ)
১১ জুলাইমঙ্গলবাররোজা রাখা সুন্নাহ
১২ জুলাইবুধবাররোজা রাখা সুন্নাহ
এই তালিকাটি জিলহজ্জ মাসের রোজার সময়সূচী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা দেই।

আমাদের শেষকথাঃ

আশাকরি, আপনারা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে খুবই সহজে জিলহজ্জ মাসের রোজা,আমল ও ফজিলত ২০২৫ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনার যদি এই বিষয়ে আরও প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধাবোধ করবেন না। আজকের লেখাটি ভালো লাগলে, আপনার প্রিয় বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।।

Leave a Comment