আসসালামু আলাইকুম টেক যুক্তি ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে সকলকে জানাই ঈদুল আযহার অগ্রিম শুভেচ্ছা। আমরা যারা মুসলমান আছি তারা ঈদ আসার আগে সকলেই জানতে চাই ঈদ কত তারিখ ও কোন দিন পালন করা হবে ?
ঈদুল আযহা, যা কুরবানির ঈদ নামেও পরিচিত, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব।
আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ঈদুল আযহা ২০২৫ কত তারিখে ? বা কোরবানির ঈদ ২০২৪ কত তারিখে?
আজকের এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনাদের জানাবো ঈদুল আজহা ২০২৫ কত তারিখে ও কোরবানি ঈদ ২০২৪ কত তারিখে?
ঈদুল আযহা ২০২৫ কত তারিখেঃ
ঈদুল আযহা সম্পর্কে অনেকেই গুগলে সার্চ করে জানতে চাচ্ছি যে, ২০২৫ সালের ঈদুল আযহা কত তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন যে ২০২৫ সালে ঈদুল আযহা কত তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। ঈদ উদযাপন করা হয় সম্পূর্ণ চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে । তাই চাঁদ দেখাকে কেন্দ্র করে এর তারিখ নির্ধারিত হয়।
প্রতি ঈদুল আযহা ও কুরবানীর ঈদ সাধারণত আরবি বছরের জিলহজ মাসের ১০ তারিখ হয়ে থাকে। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ অনুযায়ী আমরা ক্যালেন্ডার থেকে ইংরেজি মাসের একটি তারিখ নির্ধারণ করে থাকি। সেই তারিখ অনুযায়ী ২০২৫ সালে ঈদুল আযহা ও কুরবানীর ঈদ হবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ১৬ জুন এবং বাংলাদেশে হবে ১৭ জুন।
সাধারণত আরবের বিভিন্ন দেশ যেমন সৌদি আরবে ঈদ পালনের পরের দিনে বাংলাদেশে ঈদ পালন করা হয়। এ বছর যদি ১৬ জুন চাঁদ দেখা যায় তাহলে ১৭ জুন বাংলাদেশে কুরবানীর ঈদ পালন করা হবে। তবে নিয়ম যে, ঈদ পালন সম্পূর্ণ চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল।
ঈদুল আযহা কি ?
ঈদুল আযহা মূলত আরবী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে ত্যাগের উৎসব। ঈদুল আযহা যাহা কুরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব।এই দিনটি মুসলমানরা নবী ইব্রাহীম (আঃ) এর আল্লাহর প্রতি অসীম ত্যাগ ও সর্বাঙ্গীণ সমর্পণের স্মরণে পালন করে।এই দিনে মুসলমানরা পবিত্র ঈদগাহ ময়দানে গিয়ে দু’রাকাত ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করে বাসায় এসে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, আল্লাহর নামে কোরবানি করে। আমরা যারা মুসলমান আছি তারা আল্লাহর হুকুমে আল্লাহকে খুশি করার জন্য আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে থাকি।
ঈদুল আযহা কি ভাবে উদযাপন হয়ঃ
ফজরের নামাজের পর একটা নির্দিষ্ট সময়ে সকলেই ঈদগাহে সমবেত হন ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য।পুরুষরা সামনের সারিতে, আর নারীরা পেছনের সারিতে নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর ঈদের খুশি বার্তা জানানো হয় এবং একে অপরের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়।
ঈদুল আযহা ও কুরবানীর ঈদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল কোরবানি। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী মুসলমানরা গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি পশু কুরবানী করেন।কুরবানীর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগ নিজেদের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনদের জন্য, এবং এক ভাগ দরিদ্রদের জন্য।
কুরবানীর মাংস দিয়ে বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার রান্না করা হয়। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিলে খাবার খাওয়া হয়।ঈদুল আযহা ও কুরবানীর ঈদের দিন আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করা হয়।তাদের সাথে আনন্দ-উৎসব পালন করা হয়। সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরা হয়।
ঈদুল আযহা ও কুরবানীর ঈদ দান-সদকার জন্য একটি উত্তম সময়।দরিদ্র ও অভাবীদের সাহায্য করা হয়।সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখা হয়।
ঈদুল আযহা ও কুরবানীর ঈদের মূল তাৎপর্য:
ঈদুল আযহা ও কুরবানীর ঈদ মূলত আমাদের শিক্ষা দেয় আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও আত্ন-সমর্পণ প্রকাশ করা।আত্মত্যাগ ও ত্যাগের মহত্ত্ব উপলব্ধি করা।দরিদ্র ও অভাবীদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করা।সামাজিক সম্প্রীতি ও ঐক্য বৃদ্ধি করা।
জিলহজ মাসের রোজা ও আরাফার দিনের রোজা:
জিলহজ মাসে তিন ধরণের রোজা রাখা যায়। আরাফার দিনের রোজা জিলহজ মাসের ৯ তারিখে রাখা হয়। হজ্জ্বে অংশগ্রহণকারীদের জন্য এটি ওয়াজিব, এবং অন্যদের জন্য এটি অত্যন্ত সুন্নত। আশুরার দিনের রোজা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে রাখা হয়। এটি অত্যন্ত সুন্নত।ছয় দিনের রোজা জিলহজ মাসের ১১ থেকে ১৬ তারিখের মধ্যে যেকোনো ছয় দিন রাখা যায়। এটি সুন্নত।
আরাফার দিনের রোজার গুরুত্ব:
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন: “আরাফার দিনের রোজা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সারা বছরের পাপ ক্ষমা করে দেয়।” (তিরমিযি) । এটি দু’সালের রোজার সমান সওয়াব পেতে সহায়তা করে। (ইবনে মাজাহ) । আল্লাহর কাছে এটি অত্যন্ত প্রিয়।
আরাফার দিনের রোজা পালনের নিয়ম:- সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখা। সাধারণ রোজার নিয়ম মেনে চলা। আরাফার দিনের আমলগুলো পালন করা
জিলহজ মাসের রোজা পালনের সময় কিছু বিষয় মনে রাখা উচিত: নিয়ম মেনে রোজা রাখা। রোজা ভঙ্গকারী কাজ থেকে বিরত থাকা। অনেক বেশি দান-সদকা করা। দুর্বল ও অভাবীদের সাহায্য করা। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
কুরবানীর পশু জবাই করার পদ্ধতি ও দোয়া:
ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদে পশু জবাই করার কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি রয়েছে। সে নিয়ম বা পদ্ধতি অনুযায়ী পশু জবাই করতে হবে। অন্যথায় কোরবানি বাতিল বলে গণ্য হবে। নিয়ত করা: পশু জবাই করার আগে আল্লাহর নামে নিয়ত করতে হবে। নিয়তের কথা হল: “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আমার কুরবানির পশু জবাই করছি।” পশুকে পশ্চিম দিকে মুখ করে বাম পাশে শোয়াতে হবে। জবাই করার জন্য ছুরি ভালো করে ধার দিয়ে নিতে হবে। ছুরি চালানোর আগে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” বলতে হবে। ছুরি দিয়ে দ্রুত ও সাবলীলভাবে পশুর কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী এবং দুটি রক্তনালী কেটে ফেলতে হবে। পশুকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হতে দেওয়া উচিত। পশুর চামড়া ছাড়িয়ে মাংস বের করে ফেলতে হবে। কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। এক ভাগ নিজেদের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনদের জন্য এবং এক ভাগ দরিদ্রদের জন্য।
কুরবানির পশু জবাই করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা উচিত:
পশুকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না। ছুরি ভালো করে ধার দিয়ে নিতে হবে। দ্রুত ও সাবলীলভাবে জবাই করতে হবে। পশুর মুখের দিকে ছুরি না করা। পশুর চোখের সামনে অন্য পশু জবাই না করা।
সেই সাথে পশুর জবাই করার কিছু দোয়া রয়েছে। মূলত সেই দোয়াগুলো পড়েই পশু জবাই করতে হবে। কুরবানীর ঈদে পশু জবাই করার দোয়া গুলো নিম্নরূপঃ
পশু জবাই করার সময় নিম্নলিখিত দোয়া পড়া যেতে পারে:
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ – إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ – بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
অর্থ: “আমি স্বীকার করি যে আল্লাহই সর্বোচ্চ, সৃষ্টিকর্তা, আকাশ ও পৃথিবীর প্রভু। আমি ইব্রাহিমের ধর্মের অনুসারী, একনিষ্ঠ মুসলমান, মুশরিক নই। আমার সালাত, আমার পূজা, আমার জীবন ও মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি সকল জগতের প্রভু। তার কোন সঙ্গী নেই। আমি তার হুকুম মেনে চলি এবং আমি মুসলমান। আল্লাহর নামে, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সবকিছু, এবং আপনার কাছ থেকেই সবকিছু।”
যদি কেউ এ দোয়াটি না পারেন তবে ছোট্ট এ অংশটুকু পড়বেন:
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ – বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।
অর্থ: “আল্লাহর নামে, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সবকিছু, এবং আপনার কাছ থেকেই সবকিছু।”
ঈদুল আযহা নিয়ে আমাদের মতামত :
ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি ঈদুল আযহা ২০২৫ ও কুরবানী ঈদ কত তারিখে উদযাপিত হচ্ছে এই সম্পর্কে। আমরা যত মুসলমান আছি সবাই সবার সমর্থ্য অনুযায়ী কুরবানী দিব আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য। আজকের পোস্ট যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ।।